শিরোনাম:
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

Shikkha Bichitra
মঙ্গলবার, ১ অক্টোবর ২০১৯
প্রথম পাতা » বিদেশে উচ্চশিক্ষা » বিদেশে উচ্চশিক্ষার প্রস্তুতি
প্রথম পাতা » বিদেশে উচ্চশিক্ষা » বিদেশে উচ্চশিক্ষার প্রস্তুতি
১৬৬৫৮৯ বার পঠিত
মঙ্গলবার, ১ অক্টোবর ২০১৯
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

বিদেশে উচ্চশিক্ষার প্রস্তুতি

বিদেশে উচ্চশিক্ষার প্রস্তুতিউচ্চশিক্ষা গ্রহণে স্কলারশিপে বিদেশ গমনে অনিচ্ছুক শিক্ষার্থী খুঁজে পাওয়া ভার। কিন্তু ইচ্ছে থাকলেও বিভিন্ন কারণে সবার পক্ষে স্কলারশিপ নিয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ যাওয়ার সুযোগ হয় না। তবে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। স্কলারশিপের মাধ্যমে বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে বেশ কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। যেগুলো অনুসরণ করলে স্কলারশিপের মাধ্যমে বিদেশ গমনে আপনার রাস্তা অনেকটাই পরিষ্কার হয়ে যাবে।

১. সিজিপিএ :

বিশবিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রায়ই বলতে শোনা যায় বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য ন্যূনতম ৩.৭৫ সিজিপিএ পেতে হবে, অন্তত ৩.৫০ তো ধরে রাখতেই হবে। কথাটি শুধু আংশিক ও অসত্যই নয়, বৃত্তিপ্রার্থীদের জন্য দারুণ হতাশা ব্যাঞ্জকও। তবে এটা সত্য যার সিজিপিএ যত বেশি তার সম্ভাবনাও তত বেশি। যাদের সিজিপিএ ৩ পয়েন্ট এর আশেপাশে তাদেরও নিরাশ হওয়ার কিছুই নেই।

২. পাবলিকেশন্স :

সিজিপিএর ঘাটতি পাবলিকেশন্স দিয়ে কাটানো যেতে পারে। পাবলিকেশন্স আবার কী? সহজ কথায় গবেষণামূলক লেখালেখি। প্রকাশিত অথবা অপ্রকাশিত যে কোনো প্রকারের হতে পারে। জার্নাল, কনফারেন্স এমনকি নিউজপেপারেও আপনি লিখতে পারেন। পাবলিকেশন্স ছাড়া বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির সুযোগ পাওয়া যেতে পারে, কিন্তু স্কলারশিপ পাওয়া অত্যন্ত দুরূহ। আপনার মাথায় এখন যে প্রশ্নটি ঘুরপাক খাচ্ছে– কোথায় লিখব, কিভাবে লিখব, কখন শুরু করব, কার কাছে যাব ইত্যাদি ইত্যাদি। গুগলে কনফারেন্স অ্যালার্টসহ অনেক অ্যাডভার্টাইজিং ওয়েবসাইট আছে যাতে দেশি-বিদেশী বিভিন্ন কনফারেন্স সম্বন্ধে তথ্য পেতে পারেন। এছাড়া, আপনার পরিচিতদের মধ্যে এই মুহূর্তে যারা বিদেশে পড়াশোনা করছেন তাদের কাছে থেকে কিভাবে কনফারেন্স পেপার লিখতে হয় তাও জেনে নিতে পারেন। গুগলে প্রচুর উচ্চশিক্ষা বিষয়ক ব্লগ ও এই বিষয়ক ফেইসবুক গ্রুপ থেকে অনেক বড়ভাইদের কাছ থেকেও সহায়তা পেতে পারেন।

৩. মোটিভেশনস :

উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে মোটিভেসন্স, সপ, স্টোরিস, আর্টিকেল অথবা প্রবন্ধ এগুলো প্রায় একই বিষয়কে বোঝায়। যে যেই নামে ডাকে এই আর কী, তবে ‘গল্প’ শব্দটি বেশ পছন্দের। সপ হচ্ছে আপনার ব্যক্তিগত গল্প। বিষয়টি কেনো পড়তে চাচ্ছেন? পূর্ব অভিজ্ঞতা কী, গ্র্যাজুয়েশন শেষে দেশে ফিরে এসে কী করবেন? অন্য দশজনকে বাদ দিয়ে আপনাকে কেনো নেওয়া উচিত? ইত্যাদি ইত্যাদি বিষয়গুলো ধারাবাহিকভাবে গল্পের মতো করে লেখা।

অ্যাডমিশন কমিটি এমনকি এটিও জেনে নিতে চায় আপনি মানুষ হিসেবে কেমন। উচ্চশিক্ষার ধকল সামলাতে আপনি কতটুকু প্রস্তুত আছেন পাশাপাশি আপনার ব্যাকগ্রাউন্ড, প্রতিভা, অভিজ্ঞতা, সক্ষমতার একটা প্রতিচ্ছবিও তারা এই এক টুকরো কাগুজে গল্প থেকে জেনে নিতে চায়। সপ যেমন নীরস গোরচনা নয় আবার অতিরঞ্জিত আত্মজীবনীও নয়, এটি ছোটগল্পের মতো পরিমিত, প্রাসঙ্গিক ও রসালো করে লেখা বিষয়ভিত্তিক জীবনকথা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা।

অধিকাংশ শিক্ষার্থী মনে করে অ্যাডমিশন কমিটি যেভাবে চায় আমাকে সেভাবেই প্রদর্শিত হতে হবে, বাস্তবতা হচ্ছে তারা চায় আপনি আপনার মতোই থাকেন কারণ এতে আপনি আপনাকে আরও ভালোভাবে তুলে ধরতে পারবেন। তারা এমন কাউকে খুঁজছে না যে প্রত্যেক বিষয়ে পণ্ডিত, এসডিজির ১৭টা বিষয়েই স্বেচ্ছাসেবা দিচ্ছে, মাঠে মঞ্চে সমান পারদর্শী, নির্ভেজাল ও নিষ্কলুষ। সুতরাং যা না তার ভান ধরে নিজেকে সর্বশ্রেষ্ঠ প্রমাণেরও কোনো তাড়াহুড়ো নেই এখানে। ওরা কোনো নিখুঁত মহামানব খুঁজছেন না, ওরা আপনাকে খুঁজছে, আপনার ভিন্নতা, প্রাসঙ্গিকতা, স্বেচ্ছাসেবা, মেধা মনন, এমনকি ক্ষেত্র বিশেষ দুর্বলতাকে পুরস্কৃত করতে চাচ্ছে।

লেখা শুরুর আগে বিস্তর চিন্তা ভাবনা করা প্রয়োজন। কোন বিষয়ে আপনি সবচেয়ে ভালো লিখতে পারবেন। প্রতিদিন অল্প অল্প করে লিখুন অল্প অল্প করে সংশোধন করুন। আপনার জীবনের মধ্যে খুঁজে দেখেন এরকম হয়ত একাধিক অগোছালো গল্প পেয়ে যাবেন, সেখান থেকে ছোট্ট একটা গল্প তুলে আনুন যা উচ্চশিক্ষার সঙ্গে প্রাসঙ্গিক ও একই সঙ্গে প্রেরণামূলক। তারপর এসব অস্বচ্ছ অসংগঠিত গল্পগুলোকে মেরামত করে প্রয়োজন মতো কেটে ছেঁটে নিলেই হলো।

গল্পকে মসৃন করতে দিনের পর দিন চিন্তা করে প্রাসঙ্গিক বানাতে হয়। সংক্ষিপ্ত ও পরিষ্কার করে বর্ণনা করুন আপনি যা বলতে চান। শিক্ষক ও বন্ধুমহলে এ বিষয়ে আলাপচারিতা করতে পারেন। ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির কেউ হয়ত আপনাকে কিছু ভুল ধরিয়ে দেবে যা আপনি আপাতদৃষ্টিতে দেখতে পারছেন না। বিদেশে অধ্যয়নরত ২/৩ জন সিনিয়রদের গঠনমূলক মতামত নেওয়া যেতে পারে। সবার পরামর্শ নিতে গেলে আবার লেখার মৌলিকতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে কারণ প্রত্যেকেরই ভিন্ন ভিন্ন মতামত রয়েছে যা হয়ত তাদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে কাজে লেগেছে আপনার ক্ষেত্রে ওভাবে কাজে নাও আসতে পারে।

৪. রিকমেন্ডেশনস :

কার কাছ থেকে রিকমেন্ডেশন লেটার পাব বোধকরি এটা আমাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় মাথাব্যাথার কারণ। এদেশে সুপারিশপত্র দেওয়ার অর্থ হচ্ছে যেন জমাজমি লিখে দেওয়া। প্রায়শই শোনা যায় দিনের পর দিন ঘুরে ঘুরে শিক্ষক অথবা উচ্চ কর্মকর্তাদের কাছে আরজি করে একখানা স্বাক্ষর পাওয়া যেতে পারে আবার নাও পারে। এগুলো উচিত নয়, এই সংস্কৃতির পরিবর্তন হওয়া উচিত।

মোটকথা হচ্ছে কে সুপারিশপত্র দিচ্ছে ঐটা ততোটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, তাতে কী লিখা আছে দিনশেষে তা-ই মূল্যায়িত হয়। রিকমেন্ডেশনের খসড়াটা আপনি নিজেই লিখে দিতে পারেন কারণ আপনাকে আপনিই ভালো জানেন, পরে হয়ত শিক্ষক অথবা উর্দ্ধতন কর্মকর্তা সংশোধনের পরামর্শ দিতে পারেন। যিনি হয়ত কোনো দিন ইমেইল চেক করেন না এরকম সেকেলে কোনো শিক্ষকের কাছ থেকে কমন ফরম্যাটের সুপারিশপত্র (অর্থাৎ আরেকজনের নাম ফেলে দিয়ে আপনার নাম বসিয়ে দেওয়া) নেওয়ার অর্থ হচ্ছে নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মারার মতো।

৫. এক্সপেরিয়েন্সেস :

কাজের অভিজ্ঞতা স্বেচ্ছাসেবা ও চাকরি থেকে নেওয়া যেতে পারে। সংক্ষেপে বলতে গেলে, শুরু করতে পারেন সফল তরুণদের প্রজেক্ট ও প্রোফাইল রিসার্চ করার মধ্য দিয়ে। কুইন্স ইয়ং লিডার, ফোর্বস, ওমেন ডেলিভার, ওয়ান ইয়ং ওয়ার্ল্ড, ১২০ আন্ডার ৪০ এ রকম অনেক ওয়েবসাইটে তরুণদের উদ্যোগ নেওয়া বিভিন্ন প্রজেক্ট সম্মন্ধে ধারণা পেতে পারেন, পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিকূলতায় তাদের বেড়ে ওঠার ও সাফল্যের গল্পগুলোও আপনাদের দারুণ অনুপ্রাণিত করবে।

অন্যদিকে, দেশের প্রতিষ্ঠিত তরুণ সংগঠনগুলো যেমন- জাগো, সেইস, বিওয়াইএলসি, ইয়ুথ স্কুল ফর সোশ্যালএন্ট্রাপ্রেনারস (ওয়াইএসএসই), ইয়ুথ ক্লাব অব বাংলাদেশ এবং বিদেশী সংস্থা আমেরিকান সেন্টার, ব্রিটিশ কাউন্সিল, ইএমকে সেন্টার ইত্যাদি সংগঠনগুলোর মেম্বারশিপ নিয়ে সরাসরি ভলান্টিয়ারিং এক্সপেরিয়েন্স নিতে পারেন। গুলশানের আমেরিকান সেন্টারে প্রতি সপ্তাহে উচ্চশিক্ষা বিষয়ক সেমিনার হয়। এই ধরনের সংগঠনগুলো থেকে প্র্যাকটিকাল এক্সপেরিয়েন্স নেয়ার পর নিজেরা কোনো কিছুর উদ্যোগ নিতে পারেন।

৬. স্কোর :

বিদেশের প্রশ্ন ওঠলে যে শব্দটি প্রথম আপনার মাথায় আসে তা হলো ‘আইএলটিএস’। বিষয়টি আহামরি গুরুত্বপূর্ণ না হওয়াতে ইচ্ছা করেই সবার শেষে উপস্থাপন করা হয়েছে। মানুষজন যদি আইএলটিএসের চেয়ে পাবলিকেশন্সে বেশি সময় দিত তাহলে উচ্চশিক্ষায় আরও বেশি সাফল্য পেত। আইএলটিএস অনেকট হ্যাঁ/না প্রশ্নোত্তরের ম, আছে কি নেই এতটুকুই জানতে চায় কর্তৃপক্ষ।

ইউনিভার্সিটির ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা নূন্যতম সেই স্কোরটি থাকলেই হলো, এ দিয়ে অ্যাডমিশন কমিটি আপনার মেধা যাচাই করবে না। তবে এটিকে খাটো করে দেখার কোনো অবকাশ নেই। অনেকের স্কলারশিপগুলো আইএলটিএসের জন্য আটকে থাকে। তাই বিষয়টিকে অবহেলা করার সুযোগ নেই। একটা সিক্রেট বলি- আইএলটিএস পরীক্ষা দেওয়ার আগে প্রতিদিন ৩ ঘণ্টা কয়েক সপ্তাহ মকটেস্ট দিয়ে নিয়েন।



আর্কাইভ