শিরোনাম:
ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

Shikkha Bichitra
বুধবার, ৮ নভেম্বর ২০২৩
প্রথম পাতা » Default Category | সাক্ষাৎকার » আলো ভূবন ট্রাস্ট : মানবতার সেবা এবং টেকসই উন্নয়ন
প্রথম পাতা » Default Category | সাক্ষাৎকার » আলো ভূবন ট্রাস্ট : মানবতার সেবা এবং টেকসই উন্নয়ন
২৭৮ বার পঠিত
বুধবার, ৮ নভেম্বর ২০২৩
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

আলো ভূবন ট্রাস্ট : মানবতার সেবা এবং টেকসই উন্নয়ন

আলো ভুবন ট্রাস্টের মূল লক্ষ্য হলো

·         স্বাস্থ্য : গ্রামীন এলাকায় ক্যান্সার স্ক্রিনিং সেন্টার স্থাপনার মাধ্যমে ক্যান্সারের প্রাথমিক সনাক্তকরন ও প্রতিরোধ করা এবং অসংক্রামক রোগ (NCD) সম্পর্কে সচেতনতা প্রদান করা

·         ফিজিওথেরাপি সেবার মাধ্যমে প্রতিবন্ধি, অর্থোপেডিক ও পক্ষাঘাতগ্রস্তদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করা

·         শিক্ষা : বিভিন্ন প্রশিক্ষনের (ই-লার্নিং, ইন-সার্ভিস, হাতে-কলমে) মাধ্যমে ক্যান্সার চিকিৎসায় দক্ষ জনবল  তৈরি করা

·         নবায়নযোগ্য জ্বালানী : সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহারের মাধ্যমে সবুজ গ্রাম তৈরি করা

- প্রফেসর ড. হাসিন অনুপমা আজহারী, জেনারেল সেক্রেটারি, আলো ভুবন ট্রাস্ট

 

 ---

বর্তমানে বাংলাদেশে ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা ১৩-১৫ লাখ। প্রতি বছর এদেশে প্রায় ২ লাখ নতুন ক্যান্সার রোগী সনাক্ত এবং ১.৫ লাখ মৃত্যুবরণ করে। কয়েক বছর পূর্বে আধুনিক যন্ত্রপাতি ও ক্যান্সারের রেডিওথেরাপি চিকিৎসার অপরিহার্য যোগ্য জনবল, বিশেষ করে মেডিকেল ফিজিসিস্টের অভাবে অধিকাংশ ক্যান্সার রোগী বিদেশে চিকিৎসার জন্য গমন করে থাকেন। বর্তমানে, উন্নতপ্রযুক্তির মেশিনের পাশাপাশি ক্যান্সার চিকিৎসায় পর্যাপ্ত দক্ষ জনবলের মাধ্যমেই বাংলাদেশে বিপুল ক্যান্সার রোগীকে চিকিৎসাসেবা প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে।

আলো ভুবন ট্রাষ্ট (আলো-বিটি) এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. গোলাম আবু জাকারিয়া, যিনি ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক প্রদত্ত জার্মান সরকারী বৃত্তি পেয়ে জার্মানি যান। জার্মানিতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এবং বাংলাদেশ ও অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশে প্রায় ৩০ বছরের অভিজ্ঞতার আলোকে ৯০ দশক থেকে তিনি বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন সেবামূলক কাজ এবং সেমিনার করে আসছেন।

ড. জাকারিয়া ১৯৯৬ সালে জার্মানিতে ‘বাংলাদেশ স্টাডি অ্যান্ড ডেভেলপিং সেন্টার’ প্রতিষ্ঠা করেন। প্রবাসী বাংলাদেশীদের পাশাপাশি সংগঠনের সদস্য হিসেবে অনেক জার্মান নাগরিক রয়েছেন যার মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নে বিশেষ করে জার্মানি থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান বাংলাদেশে প্রসার করার জন্য সহযোগীতা করেছেন।

গ্রামের দরিদ্র মানুষের শিক্ষা ও চিকিৎসার কথা নিশ্চিতকরনের জন্য ১৯৯৯ সালে ড. জাকারিয়া তাঁর জন্মভূমি নওগাঁর ইকরকুড়িতে উচ্চ বিদ্যালয় এবং ২০০৪ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১০ সালে ‘মা ও শিশু স্বাস্থ্যকেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠা করেন যেখানে গর্ভবর্তী মা ও শিশুদের চিকিৎসা সেবা প্রদানের পাশাপাশি মোবাইল হেলথ ক্লিনিকের ব্যবস্থা ছিল যার মাধ্যমে নওগাঁ সদরের ১২টি ইউনিয়নের ৫০ হাজারের অধিক মানুষ এই হাসপাতালের সুবিধা পেয়ে আসছে। হাসপাতালটিতে স্থাপিত সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে এলইডি বাতি, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম এবং অপারেশনগুলোও পরিচালিত হত। এই হাসপাতালে স্বল্পমূল্যে মাত্র ৩০০৫০০ টাকায় নরমাল ডেলিভারি চিকিৎসা প্রদান করা হত। এই হাসপাতালের সাধারণ ডেলিভারি বিভাগ ও ওটি বিভাগ জার্মানির উন্নতমানের যন্ত্রপাতিতে সজ্জিত রয়েছে।

এছাড়াও ড. জাকারিয়া তাঁর ৯০ দশকে অভিজ্ঞতার আলোকে ও তাঁর জার্মান সহযোগীদের নিয়ে, ১৯৯৬-১৯৯৮ সালে বুয়েটে বিভিন্ন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ফিজিসিস্ট, নিাউক্লিয়ার ফিজিসিস্ট এবং অনকোলজিস্টদের নিয়ে সেমিনার ও ওয়ার্কসপ করে আসছেন। তারই ধারাবাহিকতায়, ড. জাকারিয়া ২০০০ সালে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘মেডিকেল ফিজিক্স এন্ড বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং’ বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন। বাংলাদেশে ক্যান্সার চিকিৎসার অপরিহার্য জনবলতৈরির জন্য মেডিকেল ফিজিক্স বিভাগ প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি ভিাজিটিং প্রফেসর হিসেবে সংযুক্ত ছিলেন। তিনি শিক্ষা গবেষনামূলক কর্মকান্ডের পাশাপাশি বাংলাদেশে মেডিকেল ফিজিক্সের প্রচার ও প্রসারতার জন্য অদ্যাবধি অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন। তিনি প্রবাসে থেকেও নিয়মিত বিভাগের দেখভাল করতেন এবং বাংলাদেশে চিকিৎসা পদার্থবিদ্যার প্রসারের জন্য দেশে এসে ক্যান্সার চিকিৎসার সাথে জড়িত ব্যক্তিবর্গের সাথে সাক্ষাৎ করতেন। গণবিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান থাকাকালীন তিনি জার্মান ডাড স্কলারশীপের আওতায় (সাল: ২০০৩-২০০৬, ২০১৪-২০১৭ এবং ২০১৮-২০২১) ছাত্র শিক্ষক বিনিময় চুক্তির মাধ্যমে মাস্টার্স ও পিএইচডি ডিগ্রী থিসিসের ব্যবহারিক অংশ এবং একাডেমিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য বিষয়ভিত্তিক বই ও ল্যাবরেটরি যন্ত্রপাতি সরবরাহ করেছেন। সেই সাথে ছাত্র, শিক্ষক, ডাক্তার ও মেডিকেল ফিজিসিস্টদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন। এই সহযোগী চুক্তির মাধ্যমে বিভিন্ন দক্ষ জার্মান মেডিকেল ফিজিসিস্ট নিয়মিত বাংলাদেশে আসতেন এবং শিক্ষকতা করতেন ও প্রশিক্ষণ প্রদান করতেন। 

সম্প্রতি সাপ্তাহিক শিক্ষাবিচিত্রা পত্রিকায় সাক্ষাৎকারে গুরত্বপূর্ণ কথাগুলো বলছিলেন আলো ভূবন ট্রাস্ট - এর জেনারেল সেক্রেটারি  প্রফেসর ড. হাসিন অনুপমা আজহারী। তাঁর মূল্যবান কথার কিছু অংশ এখানে তুলে ধরা হলো :

উল্লেখ্য, ড. হাসিন অনুপমা আজহারী হলেন একজন এমবিবিএস ডাক্তার, মেডিকেল ফিজিসিস্ট এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর। বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রী অর্জনের পর নয় বছর ডাক্তারি প্র্যাকটিস করেছেন। গণবিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডাড স্কলারশিপ এর মাধ্যমে Medical Physics স্নাতকোত্তর ও OWSD, ইতালি থেকে পিএইচডি ফেলোশিপের স্যান্ডউইচ প্রোগ্রামের মাধ্যমে জার্মানি ও চীনের রিসার্চ সম্পন্ন করে ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির আওতায় Medical Physics পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ২০২৩-২৫ মেয়াদে এশিয়া ওশেনিয়া ফেডারেশন অফ অর্গানাইজেশন ফর মেডিকেল ফিজিক্সের (এএফওএমপি) ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। বর্তমানে সাউথ এশিয়া সেন্টার ফর মেডিকেল ফিজিক্স এন্ড ক্যান্সার রিসার্চ এর প্রধান নির্বাহী অফিসার, এশিয়া এন্ড প্যাসিফিক অর্গানাইজেশন ফর ওমেন ইন সাইন্স ফর দি ডেভেলপিং ওয়ার্ল্ড (OWSD, ইতালি) এর এক্সিকিউটিভ মেম্বার, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি CBMSE ডিপার্টমেন্টের সাবেক পরিচালক এবং ইন্সটিটিউট অফ ন্যাচারাল সায়েন্স ডিপার্টমেন্টের প্রফেসর ও আলো ভুবন ট্রাস্টের জেনারেল সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্বরত আছেন। তিনি এশিয়াওশেনিয়া রিজিওন থেকে ২০১৮ সালে ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মেডিকেল ফিজিক্স (IOMP) কতৃর্ক অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। তিনি বাংলাদেশ মেডিকেল ফিজিক্স সোসাইটি (বিএমপিএস) এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এবং তার অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলশ্রুতিতে বর্তমানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রনালয়ে ক্যান্সার চিকিৎসায় মেডিকেল ফিজিসিস্টদের পদ জিও হয়েছে।

সাক্ষাৎকার গ্রহণ ও উপস্থাপনায় শারমিন দূতী

---শিক্ষাবিচিত্রা : আলো ভূবন ট্রাস্টের সার্বিক কার্যক্রম সম্পর্কে বললে খুশি হব?

প্রফেসর ড. হাসিন অনুপমা আজহারী : আলো বিটি স্বাস্থ্য (RBHC), শিক্ষা (পল্লীপাঠশালা), ক্যান্সার চিকিৎসায় দক্ষ জনবল সৃষ্টি (এসসিএমপিসিআর) ও নবায়নযোগ্য শক্তি (পল্লীশক্তি) সহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।

নওগাঁয় অবস্থিত ইকরকুড়ি গ্রামে আলো বিটির গ্রামীন প্রকল্প আরবিএইচসি তে সাধারণ স্বাস্থ্যসেবা, ফিজিওথেরাপী, গাইনি এবং টেলিমেডিসিন সেবার ব্যবস্থা রয়েছে। বর্তমানে ডায়াগনস্টিক ও ক্যান্সার স্ক্রিনিং সেবা চালু হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা ১৫ লাখের বেশি এবং প্রতিবছরই দেশে নতুন করে ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন দেড় লাখের বেশি মানুষ। আমাদের দেশে অধিকাংশ ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগী চিকিৎসকের নিকট শরণাপন্ন হয় একেবারে শেষ পর্যায়ে, যখন চিকিৎসা পদ্ধতি অত্যন্ত জটিল, ব্যয়বহুল এবং অনিরাময়যোগ্য। প্রাথমিকভাবে ক্যান্সার সনাক্তকরণ করলে ৭০% মৃত্যুহার কমানো সম্ভব। যেকোন রোগের মত ক্যান্সারের চারটি ধাপ রয়েছে (প্রতিরোধ, রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা ও পুনর্বাসন)। সেই পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমানে আরবিএইচসি-তে গ্রামের সুবিধাবঞ্চিত, অসহায় ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর স্বল্পমূল্যে চিকিৎসাসেবা প্রদান ও ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তার জন্য ক্যান্সার স্ক্রীনিং ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যেখানে ক্যান্সার সচেতনতার পাশাপাশি প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যান্সার সনাক্তকরণ করা সম্ভব।

অপরদিকে, SCMPCR ২০১৮ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অফলাইন এবং অনলাইন প্রশিক্ষণ আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে সফল আয়োজন সম্পন্ন করেছে। ইতিমধ্যে SCMPCR বাংলাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক, নার্স, চিকিৎসা পদার্থবিদদের জন্য কয়েকটি প্রশিক্ষণ কর্মসূচি, এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাধারণ মানুষের জন্য ক্যান্সার সচেতনতা ও স্বাস্থ্য শিক্ষা বিষয়ক কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। প্রশিক্ষণ কার্যক্রমসমূহ (EBAMP, IOMP) কর্তৃক স্বীকৃত এবং কন্টিনিউয়াস প্রফেশনাল ডেভেলপমেন্ট (CPD) পয়েন্ট সম্বলিত সার্টিফিকেট এর অন্তর্ভুক্ত। প্রশিক্ষণ এর বিভিন্ন প্রকারভেদ রয়েছে (Hands on Training, In Service Training and E-learning Program) যেখানে বিদেশী Certified প্রশিক্ষকরা প্রশিক্ষণ প্রদান করেন। SCMPCR (ওয়েবসাইট - https://scmpcr.org/) কর্তৃক আয়োজিত প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামে দক্ষিণ এশিয়ার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক দেশের প্রশিক্ষণার্থীর পাশাপাশি বাংলাদেশের প্রায় সকল সরকারি, বেসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসা পদার্থবিদগণ অংশগ্রহণ করেছেন।

পল্লীপাঠশালার মাধ্যমে, প্রত্যন্ত গ্রামের শিক্ষার্থীদেরকে অফলাইন এবং অনলাইনে বিভিন্ন বিষয়ে ইন্টারঅ্যাকটিভ এবং আকর্ষক কোর্সে অংশগ্রহণের সুযোগ প্রদান করা হয়। আলো-বিটি নওগাঁর আটটি স্কুলকে অন্তর্ভুক্ত করে ইংরেজি ভাষা, আইটি দক্ষতা এবং যোগাযোগ দক্ষতায় একটি পাইলট প্রোগ্রাম সম্পন্ন করেছে, যার লক্ষ্য শহর ও গ্রামীণ শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে ব্যবধান বন্ধ করা এবং প্রকৃত বিশ্বায়নে প্রতিযোগিতা করার দক্ষতা বিকাশ করা। সম্প্রতি এই প্রকল্পের আওতায় আলো-বিটি এবং স্পন্দনবি যৌথভাবে তিন মাস ব্যাপী কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কর্মসূচী সফলভাবে সম্পন্ন করেছে যার মাধ্যমে দরিদ্র ও বস্তি এলাকার শিক্ষার্থীদের ডিজিটাল যুগের চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবেলা করতে প্রয়োজনীয় কম্পিউটার দক্ষতা এবং জ্ঞান প্রদান করা হয়েছে।

নবায়নযোগ্য শক্তি (পল্লীশক্তি) প্রকল্পের মাধ্যমে বর্তমানে নবায়নকৃত শক্তি বা সোলার এনার্জি সম্পর্কে দেশের প্রযুক্তিতে নতুন যোগের সহায়ক হিসেবে ভূমিকা পালন করা হয়। আরবিএইচসিতে সৌরশক্তি চালিত এলইডি বাল্ব জার্মানি থেকে স্থাপন করা হয়। তখনও বাংলাদেশে সোলার এনার্জি বা এলইডি লাইট সহজলভ্য হয়নি এবং এই পর্যন্ত হাসপাতালের সকল কার্যক্রম সোলার এনার্জি এর মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়। এছাড়াও সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহারের মাধ্যমে সবুজ গ্রাম তৈরি করার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা রয়েছে এবং বিভিন্ন ধরনের গবেষণা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

শিক্ষাবিচিত্রা : আন্তর্জাতিকভাবে ক্যান্সার নিরাময়ের জন্য অনকোলজিস্ট এর পাশাপাশি চিকিৎসা পদার্থবিদদের অপরিমেয় হলেও বাংলাদেশে এখনও তা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য জানতে চাচ্ছি?

প্রফেসর ড. হাসিন অনুপমা আজহারী : উনিশ শতকের প্রথম দিকে বিশ্বে রেডিওথেরাপি জনপ্রিয় হতে শুরু করে। ১৯৫৩ সালে কুমুদিনী হাসপাতালে বাংলাদেশের প্রথম কোবাল্ট রেডিওথেরাপি মেশিন চালু হয়, ১৯৫৯ সালে ঢাকা মেডিকেলে চালু হয় দ্বিতীয় রেডিওথেরাপি মেশিন। আন্তর্জাতিকভাবে ক্যান্সার নিরামযয়ের জন্য অনকোলজিস্ট এর পাশাপাশি চিকিৎসা পদার্থবিদদের অপরিমেয় হলেও বাংলাদেশে তখনও তা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। রেডিওথেরাপিস্ট বিভিন্ন ক্যান্সার রোগীকে নির্ধারিত আক্রান্ত স্থানে মেশিনের মাধ্যমে নির্দিষ্ট পরিমাণ রেডিয়েশন প্রদান করে। রেডিওথেরাপি হলো উচ্চশক্তির আয়নযুক্ত রশ্মির মাধ্যমে ক্যান্সার কোষকে ধ্বংস করা। এই উচ্চ শক্তির আয়নযুক্ত রশ্মি সঠিক মাত্রায় এবং যথার্থ স্থানে না দেয়া হলে রোগীর জন্য ভয়ংকর পরিণতির কারণ হতে পারে। এই চিকিৎসা পদ্ধতি নিরাময়মূলক ও সস্তা। তাই রেডিওথেরাপি দিন—দিন বিশ্বে অধিক গুরুত্ব লাভ করছে।

ক্যান্সার চিকিৎসায় মেডিকেল ফিজিসিস্টদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ক্যান্সার চিকিৎসার ক্ষেত্রে ডাক্তাররা শুধুমাত্র টিউমার সনাক্ত করেন আর টেকনিশিয়ানরা মেশিনের মাধ্যমে রেডিওথেরাপি দিয়ে থাকেন। সেক্ষেত্রে নির্ভুলভাবে চিকিৎসা পরিকল্পনা করা না থাকলে রেডিওথেরাপি দেওয়ার সময় টিউমার ব্যতিত শরীরের অন্য স্থানে দেওয়া হলে শরীরের অন্যান্য অঙ্গের ব্যাপক ক্ষতিসাধিত হয় এবং নতুন করে ক্যান্সার তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এক্ষেত্রে মেডিক্যাল ফিজিসিস্টদের মূল উদ্দেশ্য হলো টিউমার কোষে অনকোলজি ডাক্তার কতৃর্ক প্রদত্ত সম্পূর্ণ ডোজ প্রদান করা এবং পার্শবর্তী অঙ্গসমূহকে অতিরিক্ত ডোজ পাওয়া থেকে রক্ষা করা। টিউমার সনাক্তকরণ পরবর্তী চিকিৎসা পরিকল্পনা করা, পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিকিরণ প্রদানের জন্য ডোজ পরিকল্পনা তৈরি করা, মেশিনের সঠিক মান নিয়ন্ত্রণ, হাসপাতালের সব পেশার জনবলের বিকিরণ সংক্রান্ত সুরক্ষা নিশ্চিত করা, টিচিং ও ট্রেনিং নিশ্চিত করা, মেশিন নির্বাচন এবং বিকিরণ নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করা ইত্যাদি কেবল চিকিৎসা পদার্থবিদ দ্বারাই সম্পন্ন করা সম্ভব। উন্নত বিশ্বে চিকিৎসা পদার্থবিদ ব্যতীত রেডিওথেরাপি প্রয়োগ অসম্ভব। বাংলাদেশে রেডিওথেরাপি চিকিৎসার সূচনালগ্নে অল্প সংখ্যক চিকিৎসক এরূপ চিকিৎসা পদ্ধতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই টেকনেশিয়ানের মাধ্যমে আয়নযুক্ত রশ্মি প্রদান করা হতো। তখন বাংলাদেশে না ছিল চিকিৎসা পদার্থবিদ, না ছিল চিকিৎসা পদার্থবিদদের কোনো পেশা সংস্থা। অধিকন্তু, রেডিওথেরাপিতে কোনো চিকিৎসা পদার্থবিদ ছিল না। বাংলাদেশে ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অধিক হলেও যন্ত্রপাতি ও দক্ষ জনবলের অভাবে অল্প কয়েকটি হাসপাতালে এই চিকিৎসা পদ্ধতি চালু ছিল। বাংলাদেশে ক্যান্সার চিকিৎসার জনবল তৈরি ছিল তখন স্বপ্নের ব্যাপার। এই স্বপ্নকে বাস্তব রূপায়ণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন স্বপ্নচারী প্রফেসর ড. গোলাম আবু জাকারিয়া। তাঁর কয়েক বছর অক্লান্ত পরিশ্রম ও মেধার সম্মিলনে আজ বাংলাদেশে মেডিকেল ফিজিক্সের একটি পূর্ণাঙ্গ বিভাগ তৈরি করা হয়েছে এবং বর্তমানে বাংলাদেশের ক্যান্সার নিরাময়ের ক্ষমতাসম্পন্ন ২৪টি চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠানে রেডিওথেরাপি বিভাগে এই বিভাগের চিকিৎসা পদার্থবিদরা সেবা প্রদান করছেন। বর্তমানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার দেশের আটটি বিভাগীয় শহরে বিশেষায়িত ক্যান্সার হাসপাতাল স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে এবং সকল সরকারি/বেসরকারি রেডিওথেরাপি বিভাগে মেডিকেল ফিজিসিস্টদের অত্যাবশ্যকতা রয়েছে।

একজন বিশ্ব সমাদৃত মানুষের নিরলস পরিশ্রমের ফসল গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘মেডিকেল ফিজিক্স এন্ড বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং’ বিভাগ। ড. জাকারিয়ার অকল্পনীয় ত্যাগ ও বিরামহীন পরিশ্রমের ফসল আজকে এই পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপে চিকিৎসা পদার্থবিদদের অভ্যুত্থান। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সহায়তায় ড. জাকারিয়া গণবিশ্ববিদ্যালয়ে এই বিভাগ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছেন। 

২০০১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত মেডিকেল ফিজিক্স স্নাতকোত্তর কোর্স বাংলাদেশে শুধু গণবিশ্ববিদ্যালয়ে আছে। মেডিকেল ফিজিক্স স্নাতকোত্তর কোর্স কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু হয়েছিলো। কিন্তু বিভিন্ন কারণ যেমন : দক্ষ শিক্ষকের অপ্রতুলতা, বিষয় সংক্রান্ত বই, গবেষণাগারে যন্ত্রপাতিসহ হাসপাতাল ইত্যাদি না থাকায় তা বন্ধ হয়। আজ হয়তো বিশেষ অজ্ঞতার কারণে আমরা অনেকেই গর্বের সাথে বলি যে, বাংলাদেশে মেডিকেল ফিজিক্স কৌশলী বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় চালু রয়েছে। আসলে বাংলাদেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় পদার্থবিদ্যা বিষয় কোর্স রয়ছে। কিছু সংখ্যক বিশ্ববিদ্যালয় পদার্থবিদ্যা কোর্সের মধ্যে Solid State Physics, Atomic Physics, Nuclear Physics - এর মতো Medical Physics বিষয়টিও চালু রয়ছে। তথ্যসূত্রে অনেকের এই ধারণাটি ভুল যে বাংলাদেশে এ বিষয় পূর্বেই ছিল। আন্তর্জাতিক নিয়মানুযায়ী, মেডিকেল ফিজিক্স স্বতন্ত্র বিষয় এবং তার অধিভুক্ত চারটি বিষয় অবশ্যই (রেডিয়শন অনকোলজি ফিজিক্স, ডায়াগনস্টিক রেডিওলজি ফিজিক্স, নিউক্লিয়ার মেডিসিন ফিজিক্স ও রেডিয়শনপ্রোটেকশন ফিজিক্স) মেডিকেল ফিজিক্সের স্নাতকোত্তর অর্জনে পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত হয়। গণবিশ্ববিদ্যালয়র মেডিকেল ফিজিক্স এন্ড বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিএসসি (সম্মান) ও মাস্টার্স ডিগ্রি প্রদানের জন্য জার্মানি ও বিশ্বের অন্যান্য দেশের মেডিকেল ফিজিক্স এন্ড বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে প্রণীত আন্তর্জাতিক মানের পাঠ্যসূচি রয়ছে। মেডিকেল ফিজিক্স বিভাগের প্রতিষ্ঠা থেকে শুরু করে বর্তমান পর্যন্ত সফলভাবে প্রসারতাসহ সব কিছুকে সম্ভব করেছেন প্রফেসর ড. জাকারিয়া ও তাঁর সহযাত্রীরা।

পরিশেষে বলতে চাই যে, মেডিকেল ফিজিক্স বিষয়টি একটি সম্পূর্ন নতুন বিষয় কিন্তু ক্যান্সার চিকিৎসার অপরিহার্য বিষয়। বাংলাদেশের প্রায় অধিকাংশ সরকারি এবং বেসরকারি বিশ্বদ্যিালয়/প্রতিষ্ঠান ব্যবসায়িক দিকে লাভবান হওয়া যাবে এমন বিষয় চালু করার জন্য আগ্রহী থাকে। শুধুমাত্র ব্যবসায়িক দিক বিবেচনার পাশাপাশি সমাজের জন্য কল্যানকর ও আবশ্যক বিষয়র দিকে গুরুত্বারোপ করতে হবে এবং প্রতিষ্ঠা ও প্রসারতার জন্য এগিয় আসতে হবে। সমাজের মানুষের ক্যান্সার আক্রান্তের কথা বিবেচনা করে, বিভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি বিশ্বদ্যিালয়/প্রতিষ্ঠান গুলোকে মেডিকেল ফিজিক্স বিষয়টি খোলার জন্য আগ্রহী হতে হবে।

বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় সকল পরিবারেই ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায়। ক্যান্সার চিকিৎসায় রেডিওথেরাপি বিভাগে দক্ষ মেডিকেল ফিজিসিস্টের মাধ্যমেই ক্যান্সার রোগীকে সঠিক চিকিৎসাসেবা প্রদান করা সম্ভব। প্রতিকারের চেয় প্রতিরোধ উত্তম তাই ক্যান্সার মৃত্যুহার কমানোর জন্য সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে প্রতিরোধস্বরূপ সচেতনতা গড়ে তোলা প্রয়োজন। আলো-বিটি অনেক সীমাবদ্ধতার মুখোমুখি হয়ও মহৎ আকাঙ্খা, সাহস এবং সহানুভূতি নিয় সমাজের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগটি গ্রহণ করেছে এবং ক্যান্সার বিষয়ক প্রতিরোধ, রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা ও পুনর্বাসন নিয় কাজ করে যাচ্ছে। সেই সাথে সরকারের স্বাস্থ্য বিষয়ক লক্ষ্যমাত্রা অর্জনসহ ইউএনডিপি এর টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি), সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা (ইউএইচসি) অর্জনের পাশাপাশি ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন (ডব্লিউএইচও) এর ’’আমাদের বিশ্বকে পরিবর্তন করা: টেকসই উন্নয়নের জন্য ২০৩০’’ এজেন্ডা অর্জনের পথে দ্রুত এগিয়ে যেতে সহায়ক ভুমিকা পালন করতে সহযোগিতা করবে।



আর্কাইভ