শিরোনাম:
ঢাকা, বুধবার, ১ মে ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

Shikkha Bichitra
বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর ২০১৯
প্রথম পাতা » Default Category | তথ্য-প্রযুক্তি » ডিজিটাল বাংলাদেশঃ ডিজিটাল সন্তান
প্রথম পাতা » Default Category | তথ্য-প্রযুক্তি » ডিজিটাল বাংলাদেশঃ ডিজিটাল সন্তান
১২৩৩৩ বার পঠিত
বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর ২০১৯
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

ডিজিটাল বাংলাদেশঃ ডিজিটাল সন্তান

রাশেদুল ইসলাম: আমার ক্যামেরা ভীতি আছে । ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে কেমন যেন ভয় পাই আমি । এক ধরণের লজ্জাও পাই । এজন্য পারত পক্ষে আমি আমার লেখায় নিজের কোন ছবি ব্যবহার করিনে । মিডিয়া হলে তো কথাই নেই । আগেই মাফ চেয়ে বসি আমি। তারপরও পেশাগত কারণে আমাকে মাঝেমাঝে মিডিয়ার ক্যামেরায় আসতে হয় । তখন কাউকে জানানো তো দুরের কথা; মনে মনে দোয়া করি-কেউ যেন সেই অনুষ্ঠানটা না দেখে । অবশ্য আমার স্ত্রী ব্যাপারটা পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন । তিনি যতটা পারেন, ঢাক ঢোল পিটিয়ে বলার চেষ্টা করেন যে, তাঁর স্বামীকে কোথায় কোথায় দেখা গেছে । আমাকেও তিনি বাধ্য করেন তাঁর সেই প্রচারে লাইক বা শেয়ার করার জন্য । তবে, এবারের বিষয়টি ভিন্ন । সেদিন ছিল১৬ অক্টোবর, ২০১৯ । ডিজিটাল ডিভাইস এন্ড ইনোভেশন এক্সপো- ২০১৯ এর শেষ দিন । সারাদিনই আমাকে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে থাকতে হয় । সেখানে স্টলগুলো ঘুরে দেখতে গিয়ে মাশফি এবং স্যামের পাশে আমি দাঁড়িয়ে যাই । একজন আমাদের ছবি তুলে দেন । মাশফি এবং স্যামের সাথে তোলা সেই দুটি ছবি আমি এখানে শেয়ার করছি।

মাশফিঃ

মাশফির কথা আমি প্রায়ই বলি । সেদিন সাউথ ইষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা লেকচার দেওয়ার সুযোগ হয় আমার। সেখানেও বলেছি । মাশফি ৭ম শ্রেণির ছাত্র । ইনোভেশন মেলায় সে তার ড্রোন (Drone) নিয়ে এসেছে । তার উদ্ভাবিত ড্রোনটি এখন ২ কেজি পরিমাণ ওজন নিয়ে ১ মাইল পর্যন্ত উড়তে পারে । শুধু উড়তে পারে তা নয়; উড়ন্ত অবস্থায় মাশফির সাথে যোগাযোগ রাখতে পারে । তার নিজের অবস্থান জানাতে পারে । মাশফি আসলে একটা শক্তিশালী উদ্ধারকারী ড্রোন বানাতে চায়; যেটা রানা প্লাজা বা বনানীর ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের মত দুর্যোগে উদ্ধার কাজে অংশ নিতে পারে ।

স্যামঃ

স্যামের সাথে এবার প্রথম পরিচয় আমার । সে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র । মাথায় হ্যাট পরা । সে রোবট বানাতে চায় । সে তার রোবটের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কাজ আমাকে বোঝাতে থাকে । আমি অবাক বিস্ময়ে তার বিশ্লেষণ ভঙ্গি দেখি ।
এরা দুজনেই ডিজিটাল বাংলাদেশের ডিজিটাল সন্তান। আমি মনে করি, মৌসুমি ফল যেমন মৌসুমি বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে; ডিজিটাল মৌসুমের যে ডিজিটাল সমস্যা- তার প্রতিকার এই ডিজিটাল মৌসুমের সন্তানেরাই দিতে পারে।
সুখের কথা এখন শুধু ঢাকা শহর নয়; সারা বাংলাদেশ জুড়ে এ ধরণের মাশফি এবং স্যাম ছড়িয়ে আছে । এসব ছেলে মেয়েদের মা বাবাকে আমার আন্তরিক অভিনন্দন । স্থানীয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আমার বিনীত অনুরোধ; এধরণের প্রতিভা সম্পন্ন সন্তানদের আপনারা চিহ্নিত করুন এবং তাদের যথাযথ প্রতিভা বিকাশের সুযোগ করে দিন । সরকার থেকেও বিভিন্ন ভাবে এধরনের সন্তানদের উদ্ভাবনে সহযোগিতা দেওয়া হয়ে থাকে । সেই সুযোগের সন্ধানও তাদের দেওয়া যেতে পারে ।
চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের মুল চালিকা শক্তি হবে নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন । নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের পাশাপাশি ডিজিটাল নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করা গেলে বাংলাদেশ খুব সহজেই এই বিপ্লবে নেতৃত্ব দিতে পারবে । তবে, এ কাজে আমাদের ডিজিটাল সন্তানদের সক্রিয় অংশ গ্রহন খুবই জরুরী ।
মাশফি এবং স্যামের মত দুজন ক্ষুদে বিজ্ঞানীর পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে আমি যেমন গর্ব অনুভব করেছি; ভবিষ্যতে বিশ্বের অনেক খ্যাতনামা মানুষেরা আমাদের চতুর্থ শিল্প বিজয়ী এসব সন্তানদের পাশে দাঁড়াতে একইভাবে গর্ব বোধ করবে – এমন প্রত্যাশা করি ।

(দুই)

কয়েকজন মায়ের কথা শুনি । মনটা খারাপ হয়ে যায় আমার । প্রসঙ্গ মাশফি এবং স্যাম । মাশফি এবং স্যামকে নিয়ে উপরের লেখাটি আমার ফেসবুকে প্রকাশিত হয় । এ প্রেক্ষিতে কয়েকজন মা আমার সাথে কথা বলেন । একজন মা জানান, এ ধরণের উদ্ভাবক সন্তানদের নিয়ে বাবা মাকে – বিশেষ করে মাকে অনেক বিড়ম্বনায় পড়তে হয় । কারণ, এসব বিষয়ে তাদের স্কুলের শিক্ষকদের কোন সহযোগিতা পাওয়া যায় না । তিনি জানান ডিজিটাল ডিভাইস এন্ড ইনভেশন এক্সপো- ২০১৯ এর মত একটা আন্তর্জাতিক পর্যায়ের মেলায় অংশগ্রহনের জন্যও মাশফি এবং স্যামের মত প্রতিভাবান ছাত্রদের ক্ষেত্রেও তাদের শিক্ষকদের অনেক অনুনয়বিনয় করে রাজি করাতে হয় । এজন্য তাদের অভিভাবকদের- বিশেষ করে মা’দের অনেক হেনস্থা হতে হয় । মেলায় অংশগ্রহন সময়ে যদি কোন ক্লাস টেস্ট হয়ে থাকে, তাহলে সেই পরীক্ষায় অংশ না নেওয়া বা খারাপ হওয়ার কারণে তাদের সন্তানদের স্কুল থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়; অনেক সময় বেরও করে দেওয়া হয় । উদ্ভাবক হিসেবে কোন প্রশংসা তো করা হয় না- অনেক ক্ষেত্রে কঠিন তিরস্কার করা হয় । এ সব ক্ষেত্রে অনেক মাকে কান্নাকাটি করতে হয়; শিক্ষকদের হাতেপায়ে ধরে তাঁদের সন্তানদের ছাত্রত্ব টিকিয়ে রাখতে হয় । এ কারণে অনেক ছেলেমেয়ে মাশফি এবং স্যামের পর্যায়ে পৌঁছানোর আগেই ঝরে যায় । অর্থাৎ, কোন ছাত্রছাত্রী সৃষ্টিশীল কোন কাজে সময় নষ্ট না করে, কেবলমাত্র যেন ক্লাসের পড়া ঠিকমত করে- এটাই সব শিক্ষক চান । একটু এদিকওদিক হলেই সেই ছাত্রছাত্রীর মাকে শিক্ষকদের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয় । এসব বিড়ম্বনা থেকে বাঁচতে বাবা মায়েরা ছেলেমেয়েদের সৃষ্টিশীল কাজকর্ম থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করেন । আর একজন মা জানান, ইনোভেশন মেলায় স্যামকে যখন প্রশ্ন করা হয়, সে সময় তিনি নিজে সেখানে উপস্থিত ছিলেন । সব প্রশ্নের জবাব স্যাম সুন্দর ভাবে দেয় । কিন্তু, তার উদ্ভাবনের কাজে কে তাকে উৎসাহ দিয়ে থাকে - এ প্রশ্নের কোন জবাব দেয়নি সে । তখন তিনি নিজে স্যামকে এ প্রশ্নের জবাবে তার মায়ের কথা বলার পরামর্শ দেন । স্যাম তখন তাঁর কানেকানে বলে, রোবট নিয়ে কাজ করলে, তার মা তাকে বকা দেন এবং এসব করলে স্কুলের পরীক্ষায় ফেল করবে বলে ভয় দেখান । এখানে স্যামের মায়েরও কোন দোষ নেই । কারণ, তাঁর ছেলের স্কুলের শিক্ষকদের তাঁকেই সামলাতে হয় এবং সে বিড়ম্বনা তাঁর জানা আছে ।

শিক্ষকগন তাঁদের প্রকৃত জিনিয়াস ছাত্রছাত্রীদের চিনতে পারেন না বলে একটা অভিযোগ রয়েছে । এ অভিযোগ অতি প্রাচীনকাল থেকেই চলমান । টমাস আলফা এডিশন এবং স্যার আলবার্ট আইনস্টাইন এঁর মত জিনিয়াসদের জন্ম না হলে মানবসভ্যতা আজকের পর্যায়ে আসত কি-না সন্দেহ । অথচ, এসব ক্ষণজন্মা মানুষের ছেলেবেলায় শিক্ষকগন শুধু যে তাঁদের গাধা বলেছেন তা নয়; তাঁদের মা’দের নাকেরজল চোখেরজল এক করে ছেড়েছেন তাঁরা । ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, শিক্ষকগন যাঁদের অপদার্থ বলেছেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাঁরাই মানব সভ্যতার অগ্রগতিতে অবদান রেখেছেন সবচেয়ে বেশী । তবে, যুগের অনেক পরিবর্তন এসেছে । আমাদের দেশে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে সরকার থেকেই ছেলেমেয়েদের উদ্ভাবনী ক্ষমতার উপর সবিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে । এ লক্ষ্যে প্রতিবছর দেশব্যাপী উন্নয়ন মেলাও অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে । আমাদের সম্মানিত শিক্ষকগন এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে খুব সহজেই তাঁদের পুরানো বদনাম ঘুচিয়ে নিতে পারেন ।

আমরা জানি চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের মুল চালিকা শক্তি হবে নতুন প্রযুক্তি । নতুন উদ্ভাবিত প্রযুক্তি । বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিতে হলে - এই প্রযুক্তি অবশ্যই দেশজ মাথা থেকে আসতে হবে । এদেশের দেশ প্রেমিক প্রতিভাবান তরুণ তরুণী এবং ডিজিটাল সন্তানদের মাথা থেকেই আসতে হবে । পূর্বের সব কটি শিল্পবিপ্লবে বাংলাদেশকে শিল্প পন্য আমদানীকারক দেশ হিসেবে থাকতে হয়েছে । যে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্লাটফরম ইতোমধ্যে তৈরি হয়েছে- ইতিহাস সাক্ষী, এই প্রথমবারের মত বাংলাদেশ একটা শিল্পবিপ্লবে নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করেছে । এই সুযোগ কাজে লাগাতে হলে মাশফি এবং স্যামের মত ডিজিটাল সন্তানদের সক্রিয় অংশ গ্রহনের পরিবেশ দিতে হবে । আর সম্মানিত শিক্ষকগণই পারেন এই সুযোগ সৃষ্টি করতে ।
শিক্ষকগন একটু আন্তরিক হলেই সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে প্রতিভা সম্পন্ন ছাত্রছাত্রীদের আলাদা করতে পারেন । শুধু তথ্য প্রযুক্তি নয়; খেলাধুলা, বিতর্কসহ অন্যান্য ক্ষেত্রেও এধরণের তালিকা হতে পারে । এসব ছাত্রছাত্রীদের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রচলিত সাধারণ নিয়ম শিথিল করা যেতেপারে । প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ এটা সহজেই করতে পারেন । প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট বিভাগ/ মন্ত্রনালয় থেকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরিপত্র জারি করা যেতে পারে । ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে জ্ঞানভিত্তিক উন্নত একটি দেশে রুপান্তর করতে হলে- এ ধরণের ব্যবস্থা নেওয়া আসলেই জরুরী ।

লেখকঃ মহাপরিচালক, ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ



এ পাতার আরও খবর

আলো ভূবন ট্রাস্ট : মানবতার সেবা এবং টেকসই উন্নয়ন আলো ভূবন ট্রাস্ট : মানবতার সেবা এবং টেকসই উন্নয়ন
‘বিশ্বদরবারে নিজেদের জানান দেবার সময় হয়েছে’ - মোঃ তানভীর হোসেন ‘বিশ্বদরবারে নিজেদের জানান দেবার সময় হয়েছে’ - মোঃ তানভীর হোসেন
নাটোরে শতাধিক শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা সামগ্রী বিতরণ নাটোরে শতাধিক শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা সামগ্রী বিতরণ
’৯৬ সালের আগের শিক্ষা সনদও যাচাই করবে ইসি ’৯৬ সালের আগের শিক্ষা সনদও যাচাই করবে ইসি
গবেষক ও বিনিয়োগকারীদের জন্য ব্যাংকিং অ্যালমানাক গুরুত্বপূর্ন অবদান রাখবে: ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ গবেষক ও বিনিয়োগকারীদের জন্য ব্যাংকিং অ্যালমানাক গুরুত্বপূর্ন অবদান রাখবে: ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ
ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করা শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে! ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করা শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে!
নর্দান বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের নবীন বরণ অনুষ্ঠিত নর্দান বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের নবীন বরণ অনুষ্ঠিত
মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষা হবে সরাসরি সশরীরে, আগামী সপ্তাহে তারিখ ঘোষণা মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষা হবে সরাসরি সশরীরে, আগামী সপ্তাহে তারিখ ঘোষণা
কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি স্পোর্টস উইক-২০১৯ সমাপ্ত কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি স্পোর্টস উইক-২০১৯ সমাপ্ত
নার্সিং ও মিডওয়াইফারি ভর্তির বিজ্ঞপ্তি নার্সিং ও মিডওয়াইফারি ভর্তির বিজ্ঞপ্তি

আর্কাইভ